21 Nov 2024, 08:21 pm

যে কারণে সমস্ত ইবাদতের মধ্যে নামায শ্রেষ্ঠ ইবাদত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নামায শ্রেষ্ঠ ইবাদত হইবার কতকগুলো কারণ রহিয়াছে এখানে উহার মধ্য হইতে কয়েকটি কারণ উল্লে­ করা হইল 
প্রথম কারণ  ইসলাম ধর্মের ফরজ কার্যসমূহ যেমন ঃ রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মারফতে অহীর দ্বারা দুনিয়ায় ফরজ করা হইয়াছে। কিন্তু নামায হযরত রসুলুল্ল­াহ (সঃ)-এর মে’রাজের সময় আল্লহর আরশের উপর ফরজ করা হইয়াছে। সুতরাং ইহা সুস্পষ্ট যে, অন্য সকল ইবাদত হইতে শুধুমাত্র নামাযের প্রতিই অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। আর কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নামায সম্পর্কে বারংবার বলা হইয়াছে ও তাগীদ করা হইয়াছে। অন্য ফরজ ইবাদত সমূহের জন্য এইভাবে তাগিদ করা হয় নাই। আল্ল­াহ তা’আলা কুরআন শরীফে ৮২ ন্থানে নামায সম্পর্কে তাগিদ করিয়াছেন। তাই নামাযই শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
দ্বিতীয় কারণ  হযরত হাছান বছরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, নামাযী ব্যক্তির জন্য আল্ল­াহ তা’আলা কিছু বিশিষ্ট মর্যাদা নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন, যেমনঃ (১) নামায আদায়কারী যখন নামাযে দন্ডায়মান হইয়া থাকে তখন তার পদদ্বয়ের নীচ হইতে আসমান পর্যন্ত আল্ল­াহ তা’আলার রহমতের মেঘে ঢাকিয়া যায় এবং অসংখ্য নেকী বৃষ্টির ন্যায় তাহার প্রতি বর্ষিত হইতে থাকে। (২) নামায আদায়কারীর চতুস্পার্শ্বে ফেরেশতারা জড়ো হইয়া তাহাকে ঘিরিয়া রাখে। (৩) নামায আদায়কারীকে লক্ষ্য করিয়া একজন ফেরেশতা বলিতে থাকে, হে আল্লহর বান্দা! তুমি যদি জানিতে সক্ষম হইতে তোমার সম্মুখে কে রহিয়াছেন এবং নামাযের ভিতরে তুমি কাহার সহিত কথাবার্তা বলিতেছ, তবে আল্ল­াহর কসম, কেয়ামত পর্যন্ত তুমি সালাম না ফিরাইয়া নামাযের মধ্যে রত থাকিতে।
তৃতীয় কারণ  (১) যখন আল্ল­াহর কোন বান্দা নামায আদায়ের জন্য দন্ডায়মান হইয়া থাকে, তখন মহান প্রতিপালক আল্ল­াহ তা’আলা তাহার সম্মুখে উপস্থিত থাকেন। নামায আদায়কারী যদি অন্য মনস্ক হইয়া থাকে, তখন আল্ল­াহ তা’আলা নামাযীকে বলেন, হে বান্দা! আমি স্বয়ং তোমার সম্মুখে উপস্থিত থাকিতে তুমি আমার খেয়াল ছাডিয়া কেন অন্য মনস্ক হইয়াছ? আমি ব্যতীত আর কে উত্তম আছে যে, তুমি তাহার প্রতি মনোনিবেশ করিয়াছ?
চতুর্থ কারণ  রোজ কেয়ামতের ময়দানে বিচারের পরে নামাযীগণকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া জান্নাতে প্রবেশের জন্য নির্দেশ দেওয়া হইবে। প্রথম শ্রেণীর লোকদের চেহারা সূর্যের জ্যোতির ন্যায় জ্যোতির্ময় হইবে। তাহাদেরকে ফেরেশতারা বলিবে, আপনারা কাহারা? কোন কার্যর কারণে আপনাদের  চেহারা  সূর্যের  জ্যোতির ন্যায় জ্যোতির্ময় হইয়াছে? জওয়াবে তাহারা বলিবে, আমরা মুসলিম, নামায ঠিকভাবে আদায় করাই আমাদের সর্বপ্রধান কাজ ছিল। তৎপর পুনরায় ফেরেশতারা বলিবে, আপনারা নামায কিভাবে আদায় করিতেন? জওয়াবে তাহারা বলিবে, আমরা নামযের জন্য পূর্বেই মসজিদে গমন করিতাম। দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষের চেহারা চতুর্দশীর চাঁদের ন্যায় উজ্জল হইবে। যখন তাহারা পুলসিরাত অতিক্রম করিতে থাকিবে, তখন পূর্বের মত ফেরেশতারা জিজ্ঞানা করিলে তাহারা উত্তরে বলিবে, আমরা মুসলিম, দুনিয়ায় নামাযের হেফাজত করাই আমাদের প্রধান কাজ ছিল।  ফেরেশতারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করিবে, আপনারা কি প্রকারে নামাযের হেফাজত করিতেন? উত্তরে তাহারা বলিবে, মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযানের আগেই  আমরা  অজু করতঃ  নামাযের  জন্য অপেক্ষা করিতাম এবং আযান হওয়া মাত্র মসজিদে গমন করতঃ নামায আদায় করিতাম। এই শ্রেণীর লোকদের চেহারা তারকামন্ডলীর ন্যায় উজ্জল হইবে। ফেরেশতারা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলে, উত্তরে তাহার বলিবেন আমরা মুসলিম, মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণ করতঃ অজু করিয়া মসজিদে হাযির হইয়া নামায আদায় করিতাম। এবং সতর্ক দৃষ্টি রাখিতাম, যাহাতে তাকবীরে উলা ছুটিয়া না যায়।
পঞ্চম কারণ  এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর চক্ষুদ্বয় যখন প্রায় অন্ধ হইবার পর্যায়ে পৌছিয়াছিল তখন মানুষেরা তাঁহাকে বলিল, আপনার চোখের চিকিৎসা করাইয়া নিন কিন্তু ইহার জন্য আপনাকে কয়েকদিন নামায আদায় করা ত্যাগ করিতে হইবে। যেহেতু তখন আপনি নড়াচড়া করিতে পারিবেন না কয়েক দিন চিৎভাবে শুইয়া থাকিতে হইবে। ইহার উত্তরে তিনি বলিয়াছিলেন, রহমাতুলি­ল আ’লামীন হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ) ফরমাইয়াছেন ঃ যদি কোন লোক জানিয়া শুনিয়া নামায আদায় করা ত্যাগ করে, তবে রোজ কেয়ামতে আল্ল­াহ তা’আলা তাহার সঙ্গে রাগান্বিত হালতে দেখা করিবেন।
ষষ্ঠ কারণ  হযরত আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলেন ঃ (১) আল্ল­াহ তা’আলা কে সন্তুষ্ট  করিবার প্রধান অবলম্বন হইতেছে নামায। (২) ফেরেশতাগণের মহব্বৎ লাভের উপায় হইতেছে নামায। (৩) পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের তরিকা হইতেছে নামায। (৪) মা’রেফাতে ইলাহীর মশাল হইতেছে নামায। (৫) ইসলামের মূল ভিত্তি হইতেছে নামায।  (৬) আল্রাহর দরবারে দোয়া কবুলের উসিলা হইতেছে নামায।  (৭) আল্ল­াহ তা’আলার দরবারে নামায ব্যতীত কোন নেক কাজ কবুল হয় না।  (৮) নামায আদায়ের কারণে রুজী-রোজগারে বরকত হয়।  (৯) শয়তান ও নফসের সহিত সংগ্রাম করিবার হাতিয়ার হইতেছে নামায।  (১০) নামাযী ব্যক্তির মৃত্যুকালে মালাকুল মউত আছানীর সহিত জান কবজের জন্য নামায সুপারিশ করিয়া থাকে। (১১) মু’মিনগণের আত্মার নূর হইতেছে নামায।  (১২) মু’মিনগণের কবর নামাযের জন্য আলোকিত হয়। (১৩) কবরে নামাযী ব্যক্তির পক্ষে তাহার নামায মুনকার-নকীরের সওয়ালের জওয়াব দিবে। (১৪) নামায আদায়কারীর সঙ্গে তাহার নামায কেয়ামত পর্যন্ত থাকিয়া সমবেদনা দেখাইবে। (১৫) রোজ কোয়ামতে হাশর ময়দানে নামায আদায়কারীর নামায তাহার মস্তকের উপর ছায়া প্রদান করিবে। (১৬) নামাযী ব্যক্তির নামায তাহার দেহের পোশাক ও মাথার টুপী হইবে। (১৭) কেয়ামতের দিন সমস্ত পাপের ওজন হইতে নামাযের ওজন ভারী হইবে। (১৮) পুলসিরাত অতিক্রম করিবার ছাড়পত্র (সার্টিফিকেট) হইবে নামায। (১৯) নামায বেহেশতের চাবি স্বরূপ। বেহেশতের দরজায় তালা খুলিয়া সে নামাযীকে বেহেশতে দাখিল করিবে।
সপ্তম কারণ  (১) নামাযী ব্যক্তি যখন নামাযের নিয়াত করতঃ  আল্ল­াহ আকবার উচ্চারণ করিয়া থাকে, সঙ্গে সঙ্গে তাহার গুনাহসমূহ (ছগীরাহ গুনাহ) এমনিভাবে ক্ষমা প্রাপ্ত হইয়া যায় যে, সে যেন এইমাত্র মায়ের উদর হইতে জন্মলাভ করিয়াছে। অর্থাৎ নিষ্পাপ হইয়া যায়। (২) যখন নামাযী ব্যক্তি ছানা পাঠ করিয়া আউযুবিল্ল­াহ পড়া শেষ করিয়া থকে, তখন তাহার প্রত্যেকটি পশমের বদলে একটি করিয়া নেকী আল্ল­াহ প্রদান করেন। (৩) যখন সূরা ফাতিহা পড়িযা শেষ করিয়া থাকে, তখন তাহার আমলনামায় একটি হজ্জ ও একটি ওমরাহর সওয়াব লিপিবদ্ধ হইয়া থাকে। (৪) রকুর তাসবীহ পড়িবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত আসমানী কিতাব তেলাওয়াতের সওয়াবের তুল্য সওয়াব লাভ করিয়া থাকে। (৫) তাহমীদ পড়িবার সাথে সাথে তাহার প্রতি আল্ল­াহ তা’আলা রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।  (৬) নামাযী ব্যক্তি যখন সিজদাবনত হইয়া থাকে, তখন দুনিয়ার জ্বীন ও ইনসানের নেকীর তুল্য নেকী তাহার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হইয়া যায়। (৭) সিজদার তাসবীহ শেষ করিবার সঙ্গে সঙ্গে যে একটি গোলাম মুক্তির সওয়াবের তুল্য সওয়াব লাভ করিয়া থাকে। (৮) নামাযী ব্যক্তি যখন নামায শেষ করতঃ সালাম ফিরাইয়া থাকে তখন তাহার জন্য নির্দিষ্ট দুইটি বেহেশতের দরজাও খুলিয়া দেওয়া হয়, যাহাতে নামাযী ব্যক্তি আছানীর সঙ্গে ইচ্ছানুযায়ী তথায় প্রবেশ করিতে পারে। ইহা হইতেছে এক রাকয়াত নামাযের সওয়াব। (মাজালিসে ছানিয়া শরহে আরবাঈন)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4712
  • Total Visits: 1261579
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৮:২১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018